“মধুর সমস্যায় পড়েছেন বৃষ্টি শিকদার ও সৌরভ দাশ। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (ক্যালটেক), স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ডিউক ইউনিভার্সিটিসহ বিশ্বের নামীদামি ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। বেছে নিতে পারবেন মাত্র একটি। কোনটি বেছে নেবেন এই দুই মেধাবী? [12]”
কিভাবে সম্ভব হয়েছে এটা ?
বাংলাদেশে গণিত অলিম্পিয়াডের সংস্কৃতির সূচনার পর বেশকিছু ব্যাপার আমরা লক্ষ্য করছি।
আমরা লক্ষ্য করছি, দেশের অনেক ছেলেমেয়ে দিনের একটা বড় অংশ আগ্রহ নিয়ে গাণিতিক সমস্যা সমাধানে ব্যয় করে।
স্কুল কলেজে আমরা গণিত বলতে Exercise করি – কিছু নির্দিষ্ট ধাপ বা কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভাষায় অ্যালগরিদম মেনে চলি মাত্র। কিন্তু গণিত অলিম্পিয়াডের সমস্যাগুলো সমাধানে ধাপগুলো বা অ্যালগরিদমটা নিজেকে দাঁড় করাতে হয়। অন্যকথায়, গণিত সৃষ্টি করতে হয়।
উদাহরণ দেই।
আমরা বলি, স্কুল কলেজে তোমরা Exercise কর, আর আমরা গণিত অলিম্পিয়াডে Problem Solving করি। তাই, এখনও যারা Problem Solving কর না, আশা করি, তোমরাও দ্রুত আমাদের দলে যোগ দেবে!
যারা Problem Solving করে তাদের অনেক ভাবতে হয়। ভাবতে গিয়ে তাদের “নিউরনে অনুরনন” হয়, তারা অনেক ভালভাবে চিন্তা করতে, বিশ্লেষণ করতে শেখে। গণিত অলিম্পিয়াড সূচনার পর একটা প্রজন্ম গড়ে উঠছে যাদের গড় IQ আগের প্রজন্মগুলোর তুলনায় বেশি। নতুন প্রজন্মের এই ছেলেমেয়েরা অনেক ভালভাবে চিন্তা করতে পারে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দৈনিক এ নিজের ছবি দেখা, বিশ্ব প্রতিযোগিতায় নিজ দেশকে Represent করা – অনেক বড় Inspiration।
এই মেধাবী ছেলেমেয়েগুলো যখন দেশ ও সমাজের দায়িত্ব নেবে, তখন আমরা নতুন একটা দেশ গড়ে তুলবো। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতির জন্য আমাদের কিশোর তরুণ গণিতবিদদের একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে। গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে চিন্তা করার, বিশ্লেষণ করার যে ক্ষমতা বিকশিত হয়েছে, সেই ক্ষমতাকে আশেপাশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রয়োগ করা শুরু করতে হবে।
আমরা লক্ষ্য করেছি, গণিত অলিম্পিয়াডের অনুষ্ঠানগুলোতে অনেক ভাল ভাল কথা হয়। আলোকিত মানুষ হওয়ার, দেশকে ভালবাসার অনুপ্রেরণা পায় ছেলেমেয়েরা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দেশের গুণী মানুষদের কাছ থেকে দেখার সুযোগ পায়, প্রশ্ন করতে পারে, কথা বলতে পারে, চাইলে অটোগ্রাফও নিতে পারে!
দুটা চমৎকার ব্যাপারের
- একটা হল “গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো” থিম – অনেকগুলো ছেলেমেয়ে নিজের জীবন নিয়ে, দেশ নিয়ে বড় বড় স্বপ্ন দেখছে এবং তার চেয়েও বড় কথা – স্বপ্নগুলোকে বিশ্বাস করছে [14]। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী দেশের শিশুকিশোর গণিতবিদদের কাছে যে ৩টি স্বপ্নের কথা বলেছিলেন তাদের মাঝে ছিল ২০২২ সালের মধ্যে একজন বাংলাদেশী গনিতবিদের ফিল্ডস মেডল জয় এবং ২০৩০ সালের মধ্যে একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর নোবেল পুরষ্কার জয়। আমাদের ক্ষুদে গণিতবিদরা স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে নিজেদের তৈরি করছে।
- আরেকটা হল একেবারে ক্লাস থ্রি – ফোরের ছেলেমেয়েরা, ড. ইকবালের ভাষায়, “পেন্সিল কামড়ে” অঙ্ক করতে আসে!
আমরা লক্ষ্য করেছি, বাংলা মাধ্যমের বেশ কিছু ছেলেমেয়ে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেল এ পড়ার সুযোগ পেয়েছে। মুন পড়ছে Harvard University তে [1], নাজিয়া MIT [2] (তা নাহলে “MIghTy” শব্দটা এভাবে লেখা আমরা কোত্থেকে শিখতাম!), ইশফাক Stanford University [3], তানভির Caltech [4] (আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রফেসর ড. ইকবাল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে Post-Doctoral Researcher হিসেবে কর্মরত ছিলেন) [5], সামিন Cambridge University [6]।
আগে আম্যারিকা, ইউরোপ, এশিয়া বা অস্ট্রেলিয়ার গ্রাজুয়েট স্কুলগুলোতে আমরা এমএস বা পিএইচডি করতে যেতাম। ইংরেজি মাধ্যমের অবস্থাসম্পন্ন ছেলেমেয়েরা পড়ত আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলে। কিন্তু “বাংলা মাধ্যম” থেকে “স্কলারশিপ নিয়ে” “আন্ডার গ্রাজুয়েট” লেভেলে “বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে” পড়তে যাওয়াটা নতুন!
“বাংলা মাধ্যম” থেকে “স্কলারশিপ নিয়ে” “আন্ডার গ্রাজুয়েট” লেভেলে “বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে” পড়ার পথ দেখানোর কৃতিত্বের দাবিদার বাংলাদেশ গণিত দলের কোচ ড. মাহবুব মজুমদার [7]; যিনি নিজে MIT থেকে Electrical Engineering এ আন্ডারগ্রাড, Stanford University থেকে Civil Engineering এ মাস্টার্স এবং Cambridge University থেকে Theoretical Physics এ PhD করে Imperial College এ [8] Post Doctoral করছিলেন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশে থেকে যান। বিদেশী ও ইঞ্জিনিয়ারিং আন্ডারগ্রাড ডিগ্রি এবং আরও কিছু কারণ দেখিয়ে তাকে Dhaka University Physics Department এ যোগ দিতে দেওয়া হয়নি [9]। তিনি স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশে একটা বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। আমরা তার পাশে থাকবো।
১৯০৫ এ আইনস্টাইনের “Miracle Year” [10] স্মরণে ২০০৫ সালের বাংলাদেশ জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে আইনস্টাইন এবং পদার্থবিজ্ঞানের উপর একটা প্রশ্ন উত্তর পর্ব ছিল। সেখানে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম। গণিত ক্যাম্পে ড. মাহবুবের সাথে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা হত। মেক্সিকোতে যাওয়ার আগে প্রেস কনফারেন্সে দেখি তিনি স্ট্রিং থিউরি (String Theory) র [11] একটা পেপার নিয়ে হাজির!
আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্য করার মত। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (International Mathematical Olympiad) আমাদের সাফল্যের মাত্রা দ্রুত বাড়ছে [15] [16]। আমাদের কিশোর – তরুণ গণিতবিদরা ২০০৬ সালে অনারেবাল মেনশান, ২০০৯ সালে ব্রোঞ্জ মেডেল, ২০১২ সালে সিলভার মেডেল জয় করে এনেছে। আমরা আশা করছি, এই ধারা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশ গণিত দল আগামীতে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড থেকে গোল্ড মেডেল নিয়ে ফিরবে! গোল্ড মেডেল জয়ী সেই গণিতবিদ হতে পারো তুমিই!
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পাশাপাশি আমাদের ক্ষুদে গণিতবিদরা এশিয়ান-প্যাসিফিক ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াডে (APMO) অংশগ্রহণ করছে এবং পদক জয় করে আনছে [16]।
শিরোনামে আমি “সংস্কৃতি” শব্দটির উল্লেখ করেছি। এর সবচেয়ে বড় কারণ অবশ্যই বাংলাদেশের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের গণিত তথা মেধার চর্চা। কিন্তু মেধা চর্চার এই ঢেউ এসে লেগেছে আমাদের সংস্কৃতির নানা অঙ্গনে, নানা অংশে। গণিত চর্চার জন্য প্রকাশিত হচ্ছে বই [13]। একুশের বই মেলায় গণিতের বইয়ের স্টলে ভিড় জমাচ্ছে ছেলেমেয়েরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে গণিত অলিম্পিয়াড [17]।
গণিত অলিম্পিয়াড সূচনা এবং সাফল্যের পর বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে অলিম্পিয়াড শুরু হয়েছে।
- পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড
- রসায়ন অলিম্পিয়াড
- জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড
- প্রাণরসায়ন অলিম্পিয়াড
- ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড
- কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। আমাদের স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা এখন আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় মেডেল জয় করে আনছে!
গণিত অলিম্পিয়াডের এই সংস্কৃতি সম্ভব হয়েছে কিছু তরুণ – তরুণীর স্বেচ্ছা কর্মোদ্যোগে। আমরা তাদের “মুভারস” (MOVERS – Math Olympiad Volunteers) বলে জানি। তাদের নেতৃত্বে আছেন দেশের বহু উদ্যোগের পেছনের মানুষটি – মুনির হাসান। একটা শুভ উদ্যোগে দেশের তরুণদের উৎসাহী অংশগ্রহণ আমাদের প্রাণশক্তিতে ভরপুর তরুণ প্রজন্মকে সংজ্ঞায়িত করে।
তরুণ প্রজন্ম এখন নেতৃত্ব নিতে সক্ষম
– ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বিভাগীয় প্রধান, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
ভর্তি, মান ও দক্ষ জনশক্তি
– ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ: অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ফেলো, বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
তোমাদের জন্য লেখা
- প্রোগ্রামিং এ হাতেখড়ি
- মায়ানদের মায়াময় জগতে একদিন
- একবিংশ শতাব্দীতে প্রাযুক্তিক বিপ্লব
- Problem Solving
- Areas Of Mathematics I Am Learning
- How Mathematics Has Got Broader With Time
- Measuring Intelligence: Pitfalls and Fallacies
- My Mental Toolbox
- Managing Complexity
আরও কিছু লেখা
- ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা
- নাগরিক শক্তির শিক্ষা উন্নয়ন পরিকল্পনার রূপরেখা
বাংলাদেশে বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড
- Bangladesh Physics Olympiad
- Bangladesh Chemistry Olympiad
- Bangladesh Biochemistry Olympiad
- Bangladesh Biology Olympiad
- Bangladesh Informatics Olympiad
- Science Olympiads Blog
রেফরেন্স
- Harvard University
- MIT
- Stanford University
- California Institute Of Technology
- Dr. Muhammed Zafar Iqbal
- Cambridge University
- Dr. Mahbub Majumdar
- Imperial College
- A painful funny story
- Einstein’s Miracle Year
- String Theory
- এমআইটির পথে…
- গণিতের জাদু বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
- গণিত শেখো স্বপ্ন দেখো: জাতীয় গণিত উৎসব বিশেষ সংখ্যা: ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি, ঢাকা
- আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড: এবার তিনটি ব্রোঞ্জ পেল বাংলাদেশ
- এপিএমওতে বাংলাদেশের দুটি ব্রোঞ্জ পদক
- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক গণিত অলিম্পিয়াড