বিদ্যমান রাস্ট্রব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী কিভাবে সরকারের নির্বাহী বিভাগ পরিচালনা করেন? দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে কিভাবে পরিচালনা করা উচিত? আর্টিকেলটি প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়।
আমাদের সরকারগুলোর পরিকল্পনায় ভিশন নেই।
বাস্তবায়নে আন্তরিকতা বা দক্ষতা কোনটাই নেই।
- “ডিজিটাল বাংলাদেশ” ভিশনটি যুগোপযোগী – কিন্তু ভিশন বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে আন্তরিকতা বা দক্ষতার কোন ছাপ নেই। প্রায় ৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পরও “অনলাইন পেইমেন্ট গেইটয়ে” এর সুবিধা চালু হয়নি – এই ব্যর্থতা কি গ্রহণযোগ্য?
কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও সচিবালয় সম্মিলিতভাবে এক একটা ভিশন বাস্তবায়নে আন্তরিকতা এবং দক্ষতার সাথে কাজ করবে, অগ্রগতির উপর নির্দিষ্ট সময় অন্তর পর্যালোচনা হবে, দেশের বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগানো হবে – এমন কিছু দেখা যায় না।
- একাধিক মন্ত্রনালয়ের কাজের সমন্বয়
- ঢাকা নগরের উন্নয়নের জন্য প্রায় এক ডজনের মত মন্ত্রনালয়ের কাজের সমন্বয়ের প্রয়োজন। এই ধরনের ক্ষেত্রগুলোতে ভিশন বাস্তবায়নে কয়েকটি মন্ত্রণালয় এবং সচিবালয়ের কাজের সমন্বয়ের প্রয়োজন।
- পরিকল্পনাহীন অর্থ অপচয়
- মাঝে মাঝে বিপুল অর্থ ব্যয়ে দুই একদিনের জন্য বিদেশী বিশেষজ্ঞ আনা হয় এবং ওটুকুতেই সার। তার মতামত কতটুকু কাজে লাগানো হয় – তা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ আছে।
- কয়েক বছর আগে (২০১১) পত্রিকায় চোখে পড়েছিল মার্কেটিং গুরু ফিলিপ কটলারকে দেশে আনা হয়েছে [1]। তিনি বাংলাদেশকে ফোকাস নির্ধারণ করে নিজস্ব কয়েকটি ব্র্যান্ড গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এই পরামর্শ মত দেশে আদৌ কোন কাজ হয়েছে কি? না হলে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে বিদেশী বিশেষজ্ঞ আনা কি শুধুই ভোটের রাজনীতিতে লোক দেখানো ব্যাপার?
আমাদের বাজেটে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে বরাদ্দের কতটুকু উন্নয়নে ব্যয় হয় আর কতটুকু দুর্নীতি হয় – তা নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত।
বিভিন্ন খাতে যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় – ব্যাপক দুর্নীতি এবং চরম অদক্ষতা, অপচয়ের পর – সত্যিকারের উন্নয়ন কতটুকু হয় – তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার যথেষ্ট কারণ আছে।
- একবার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপর একটা রিপোর্টে দেখি – বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বিদেশে ট্যুর করেন। এসব ভ্রমণে দেশের ট্যুরিজমের প্রচার কতটুকু হয় – তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে।
- বাংলাদেশকে টুরিস্ট ডেস্টিনেশান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কোন ভিশন আছে বলেও মনে হয়নি – বাস্তবায়ন তো দূরের কথা।
আমাদের আরেকটা সমস্যা সরকারগুলোর কাজের অধারাবাহিকতা। নির্বাচনে জয়ী হয়ে অপর দল ক্ষমতায় এলে পূর্ববর্তী সরকারের পরিকল্পনাগুলোর অনেকগুলোই বাতিল হয়ে যায়। ফলে শেষ পর্যন্ত কিছুই হয় না।
অর্থ বছরের শুরুতে বাজেটে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় – তা মেনে চলতে হবে – আমাদের দেশে এমন কিছু নেই। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে হঠাৎ সিধান্ত নেওয়া হয় – “অমুক” পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। তখন বিভিন্ন মন্ত্রানলয় থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করে “অমুক” পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়! আমাদের দেশে সবগুলো মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকলে – এই ধরণের গোঁজামিল – সমস্যা তৈরি করত।
উদাহরণ থেকে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করি।
- ধরা যাক, বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে মোট বরাদ্দের ১০ ভাগ আর কৃষিতে ৫ ভাগ। হঠাৎ বছরের মাঝখানে সরকার ঠিক করলো কৃষিতে “ক” পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে বরাদ্দের ২ ভাগ কৃষিতে আনা হবে। আমাদের দেশে দেখা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই ২ ভাগ বরাদ্দের জন্য “বাস্তবায়ন করতেই হবে” এমন কোন পরিকল্পনা – বছরের শুরুতে করে রাখেনি। যদি রাখত – তাহলে বছরের মাঝখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাজেটের অর্থ কৃষি মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তর মেনে নিত না।
মন্ত্রণালয়, সচিবালয় এবং বাজেট বরাদ্দ – সমন্বয়ের মাধ্যমে সরকারের নির্বাহী বিভাগ পরিচালনা
1. বাজেট ঘোষণার আগে অর্থ মন্ত্রণালয় সবগুলো মন্ত্রণালয়ের কাছে ভিশন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাবনা দিতে আহ্বান করবেন।
- [আমাদের দেশে আগে বাজেট প্রণীত হয়। মন্ত্রণালয়গুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। তারপর মন্ত্রণালয়গুলো ভাবতে বসে, বরাদ্দকৃত অর্থ কিভাবে খরচ করা যায়!]
2. লক্ষ্য এবং পরিকল্পনাগুলো হবে সুনির্দিষ্ট এবং Quantitative (সংখ্যা দিয়ে পরিমাপযোগ্য)।
- যেমন – ধরা যাক, বর্তমানে স্বাক্ষরতার হার ৬৭ ভাগ, একে ৫ বছরে ৯০ ভাগের উপর উন্নীত করতে এই এই পরিকল্পনা (“এত”গুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়, “এতগুলো” বয়স্ক শিক্ষা বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে; বাজেটে “এত” বরাদ্দ লাগবে)।
- সুনির্দিষ্ট এবং Quantitative (সংখ্যা দিয়ে পরিমাপযোগ্য) হলে অগ্রগতি পরিমাপ করা যাবে – কি কি করতে হবে – তার একটা সুস্পষ্ট ছবি থাকবে।
3. প্রত্যেক মন্ত্রণালয় সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ (এবং যদি কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একাধিক সচিবালয়ের কাজের সমন্বয়ের প্রয়োজন পড়ে তবে সচিবালয়ের একাধিক বিভাগ) এবং দেশের Experts দের সাথে নিয়ে দেশের উন্নয়নে ভিশন, পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রস্তুত করবেন।
4. তারপর অর্থ মন্ত্রী সবগুলো মন্ত্রণালয় এবং জনগণের দাবি – সমন্বয় করে সংসদে বাজেট প্রস্তাব করবেন।
- বাজেট প্রণয়নে
- অর্থ মন্ত্রণালয়,
- শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়,
- পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়
– ৩টি মন্ত্রণালয় একসাথে কাজ করবে।
সরকারি দল, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ, জনগণ সবার মাঝে আলোচনার পর প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে বাজেট পাশ হবে।
5. এরপর মন্ত্রণালয়গুলো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বছরব্যাপী পরিকল্পনা হাতে নেবেন এবং পরিকল্পনার একটি copy প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেবেন।
6. পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রগতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর মনিটারিং করা হবে।
- লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা Quantitative হলে অগ্রগতি মনিটারিং করা সহজ।
- যেমন – ধরা যাক, শিক্ষাখাতে “১০০টি” নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। “৮০টি” স্থাপিত হয়েছে। বাকি ২০টি স্থাপন করতে কি করতে হবে, হবে না, “সময়” কত লাগবে, “খরচ” কত – সব Quantitative estimation.
আর এভাবে মন্ত্রণালয়, সচিবালয় এবং বাজেট বরাদ্দ সমন্বয়ের মাদ্ধমে দেশ এগিয়ে যাবে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে।
রেফরেন্স